আজ থেকে প্রায় ১৭-১৮ বছর আগে একটা হয়েছিল দাবার একটা মহারণ। খেলেছিলেন দাবার তখনকার বিশ্ব-সম্রাট, Garry Kasparov, আর Magnus Carlsen, যার বয়স তখন মাত্র ১৩ বছর।
খেলাটায় একটা অদ্ভুত জিনিস দেখা গিয়েছিল।
Garry Kasparov প্রচণ্ড মনোযোগ সহকারে নিজের প্রত্যেকটা চাল দিচ্ছিলেন, কিন্তু Magnus নিজের টেবিলে পর্যন্ত বসছিলেন না!
একটা করে চাল দিয়েই তিনি নিজের টেবিল ছেড়ে উঠে যাচ্ছিলেন, এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। আরও যে অনান্য খেলা হচ্ছিল বাকি টেবিলগুলোতে, সেই খেলাগুলোও দেখছিলেন, ইত্যাদি।
খেলা শেষের ফল?
খেলাটা ড্র হল। কিন্তু বিশেষজ্ঞগণ আজকে দাঁড়িয়ে বলেন যে Garry Kasparov সেইদিন প্রচণ্ড ভাগ্যবান ছিলেন যে তিনি হেরে যাননি।
কারণ, Magnus সেইদিন প্রায় পুরো খেলাটাতেই একটা "upper hand" রেখে চলেছিলেন। তাঁর বেশিরভাগ চালই Garry Kasparov-এর থেকে ভালো ছিল।
এবং, Garry Kasparov নিজেও এটা বুঝেছিলেন। কারণ, ড্র হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই তিনি ওই টেবিল ছেড়ে গটগট করে উঠে চলে গিয়েছিলেন, কারও সাথে কোনোরূপ কথা না বলেই।
Magnus Carlsen-কে বহুবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, যে তিনি বার বার ওরকম ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন কেন?
তখন Magnus Carlsen সামনে আনলেন তাঁর অসামান্য স্মৃতিশক্তির 'রহস্য'। সেটাকে ENGLISH-এ বলা হয়, "chunking"।
মানে?
তিনি দাবার একটা করে চাল দিতেন প্রচন্ড মনোযোগ সহকারে। কিন্তু, যখনই সেই চালটা দেওয়া হয়ে গেল, তখনই তিনি নিজের মনোযোগটা সেই জায়গা থেকে সরিয়ে আনতেন।
এই "সরিয়ে আনার" সময়টুকু তিনি বাকি টেবিলের খেলাগুলো দেখতেন। বা এদিক ওদিক এমনি ঘুরে বেড়াতেন। মানে, মনকে মনের ইচ্ছেমতো চলতে দিতেন, ওই কয়েক মুহুূর্ত।
এই জিনিসটাই পড়াশোনাতেও কাজে লাগানো যেতে পারে।
যখন কিছু পড়ছ,
পুরো মনোযোগ সহকারে পড়ো। কতক্ষণ? সেটা তোমার উপর নির্ভর করছে। আমি যেমন ৩০ মিনিটের বেশি একনাগাড়ে কিছু পড়তে পারি না।
৩০ মিনিট শেষ হলেই, আমি ওই ৩-৪ মিনিটের একটা ছোট্ট বিরতি নেই।
সেই বিরতিটাতে আর কোনও পড়াশুনো নেই। তখন মনের যে দিকে ইচ্ছে করে, সেই দিকেই চলে যায়।
আবার ওই ৩-৪ / ৫ মিনিট শেষ হলে শুরু হয় পড়া।
মোটামুটি ৯০ মিনিট পরে আমি নেই একটা বড়ো বিরতি। প্রায় ২০ মিনিটের।
সেই সময়ে মোটামুটি যেটাই ইচ্ছে করে, সেটাই করি। বন্ধুদের সাথে গল্প, "Quora"-তে নিজের পরের লেখার জন্য গুগলে কিছু খুঁজে দেখা, রেডিটে কোনও পোস্ট করা, ইত্যাদি।
যখন কোনও প্রশ্নোত্তর করছি।
এইবার হয় ঝামেলা। এরকম তো আর হতে পারে না, যে একটা করে প্রশ্নের উত্তর দেব, আর চারপাশে ঘুরে আসব!
তাই, এখানে আমি নিজের জন্য একটা সীমা ঠিক করে নিয়েছি।
মোটামুটি যখন থেকে দেখি যে প্রশ্নগুলো খুবই কঠিন লাগতে শুরু করেছে, বা বেশ অনেকগুলো প্রশ্ন পরপর পারছি না, তখন এক প্রকার বাধ্য হয়েই একটা বিরতি নেই।
প্রায় ৫ মিনিটের টানা বিরতি।
যখন প্রায় প্রত্যেকটা প্রশ্নই সোজা থাকে, ও সবগুলোই পেরে যাচ্ছি, তখন হয়ে যায় ঝামেলা। কারণ, তখন আমি কোনও বিরতিই নেই না!
হ্যাঁ, যে কটাই থাকুক, শেষ করে উঠি। হ্যাঁ, বড়ো বড়ো প্রশ্ন থাকলে আলাদা কথা। তখন ৫-৬টা করার পরেই আসে সেই বিরতি।
তবে, এই দুটো ক্ষেত্রেই জিনিসটাকে কি করে সামলাবে, সেটা সম্পুূর্ণ তোমার উপরেই। আমি আমার উপায়টা বললাম।
আর হ্যাঁ, ভালো কথা। এই উপায়টা খুব একটা লোকজনকে বলতে শুনবে না। কারণ, এটা কার্যকরী করাটাই একটা ধৈর্যের পরীক্ষা। সহজে যেটা পাশ করতে পারবে না।
আরো পড়ুন:-
- কিছু লাইফ হেক
- সকালে ঘুম থেকে উঠে কী খাওয়া উচিত?
- পৃথিবীর বিখ্যাত 5 টি ব্রান্ডের লোগোতে লুকানো সব অদ্ভুত রহস্য গুলো জেনে নিন।