টক দই খাওয়ার উপকারিতা কী? কিভাবে টক দই খাবেন ?

টক দই

খাবারের মধ্যে টকদই খুব পরিচিত একটি নাম। প্রতিদিন টক দই কেন খাওয়া উচিত তা জেনে রাখা জরুরি। কারণ, প্রতিদিন টক দই খাওয়া উচিত। টক দই কেন খাওয়া উচিত আসুন জেনে নেই।

আমরা অনেকেই মনে করি দুধ খেলে আমাদের শরীরে ফ্যাট জমে যায়। দুধে যে ফ্যাট আছে সেটি এড়িয়ে যাওয়ার জন্য অনেকেই দুধ খাওয়ায় বন্ধ করে দেন। আমরা জানি যে বিভিন্ন বয়সীদের জন্য দুধ একটি আদর্শ খাবার। তাই দুধ এড়িয়ে যাওয়া আমাদের উচিত নয়। যদি মনে করি যে দুধ খেলে আমাদের শরীরে ফ্যাট জমতে পারে তাহলে অবশ্যই আমাদের দুধের পরিবর্তে হিসেবে টক দই টা খেতে পারি।

টক দই খাওয়ার উপকারিতা কী ? কিভাবে টক দই খাবেন ?
What are the benefits of eating sour yogurt? How to eat sour yogurt?

টক দই খাওয়ার উপকারিতা হলো টক দই এ প্রচুর পরিমাণে প্রবায়টিকস থাকে। প্রবায়টিকস হলো একটি অর্গানিজম যেটি আমাদের ডাইজেস্টিভ পাওয়ার কে বাড়িয়ে দেয়। যাতে আমাদের পেটে যে কোন সমস্যা হোক না কেন বা যাদের হজম প্রক্রিয়া খুবই দুর্বল তাদের অবশ্যই খাবারের টক দই রাখা উচিত। টক দই আমাদের খাবারকে সহজে হজম করতে সাহায্য করে। আবার অনেকেই আছে যারা দুধ হজম করতে পারেন না তাঁদের ক্ষেত্রে কিন্তু দই হজম হয়ে যায়। কারন খেয়াল রাখতে হবে আমরা যখন দুধ খাই তখন আমাদের পেটে যাওয়ার সময় আমাদের হজম প্রক্রিয়ার যে রস আছে সেটা দই এ পরিণত হয়। তাই আমরা যারা সরাসরি দুধ হজম করতে পারি না তাদের দই হজম হয়ে যায়।

আরও পড়ুন:-সবুজ মটরশুটির উপকারিতা

অনেক সময় দেখা যায় উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েরা দুধ খেতে চায় না তাদের কিন্তু আপনি টক দই দিতে পারে। কারণ আমরা অনেক সময়ই সবজি বা বিভিন্ন ফল জাতীয় খাবারে টকদই মিশিয়ে রান্না করা হয় সেটা আমাদের প্রোটিন ও ভিটামিনের প্রয়োজন মিটিয়ে থাকে। অর্থাৎ যদি সরাসরি না খাওয়া যায় বা খেতে না পারেন তবে রান্না করে খেতে পারেন। অনেকবার ছাড়াই আছে যারা মিল্কশেক খেতে চাই তাদের কিন্তু আপনি এই পদ্ধতিতে খাওয়াতে পারেন বা খেতে পারেন। এতে মিল্কশেকটির ক্যালরি অনেক বেড়ে যায় এবং এটি অনেক স্বাস্থ্যসম্মত হয়।

এই উপায় গুলো যদি আমরা মেনে খেতে পারি এবং আমাদের প্রতিদিনের খাবারের যদি আমরা টক দই রাখতে পারি তাহলে দেখা যাবে যে ক্যালসিয়াম প্রোটিন এবং যেটি আমাদের হজমের প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে সেটি আমরা নিশ্চিত করতে পারি। এবং নিজের জীবনকে অনেক স্বাচ্ছন্দ্যময় করে রাখতে পারি।

প্রতিদিন কখন, কতটুকু টক দই খাওয়া যাবেঃ

* একবারে এক কাপ টক দই খাওয়া যায়। বেশি বেশি কোনকিছুই ভালো নয়। টক দইয়ের ক্ষেত্রেও কথাটা প্রযোজ্য। সারাদিনে একচামচ করে কিছুক্ষণ পর পর টাক দই খেতে পারেন বা একবারে এক কাপ খাবেন

* রাতে দই খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক। কফ বা ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা থাকলে রাতে দই না খাওয়াই ভালো। আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞদের মতে রাতে দই খাওয়া ঠিক নয়। কেননা এটি মিউকাস বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তবে কেউ চাইলে দইয়ের বদলে ঘোল খেকে পারেন।

* দিনের বেলায় দই খেলে তা চিনি ছাড়া খান এবং যদি রাতে দই খেতে চান তবে তাতে চিনি অথবা কালো গোলমরিচ মিশিয়ে খান। এটি হজমে সাহায্য করে এবং পাচনতন্ত্রকে সুস্থ রাখে।

* কখনই গরম দই খাওয়া ঠিক নয়। গুনগত মানের জন্য বাড়িতে বানানো দই খাওয়া উচিত।

* বাজার থেকে কেনার আগে দই এর উৎপাদন এবং মেয়াদ দেখে কিনুন। নাহলে পেটের পীড়া,বমি, ডায়রিয়া ইত্যাদি হতে পারে। এক্ষেত্রে উপকারের চেয়ে ক্ষতিটাই হবে বেশি।

কিভাবে টক দই খাওয়া যায়ঃ 

টক দই বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। যেমন- বোরহানি, লাচ্ছি, সালাদে, রান্নায় এমনকি টক দইয়ের সঙ্গে ফল, মধু, বাদাম ইত্যাদি মিশিয়েও খাওয়া যায়। চলুন কিভাবে জেনে নেয়া যাক কিভাবে খাওয়া যায় টক দইঃ

What are the benefits of eating sour yogurt? How to eat sour yogurt?


১। বোরহানি হিসেবে

টক দই খাওয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি হচ্ছে বোরহানি করে খাওয়া। টক দইয়ের ভিতর বিট লবন, গোল মরিচ গুঁড়া, পুদিনাপাতা বাটা, কাঁচা মরিচ ইত্যাদি দিয়ে তৈরী করা বোরহানি খেতে যেমন অসাধারন তেমনি স্বাস্থ্যকরও বটে।

এছাড়া স্বাদ অন্যরকম করতে তেতুলের রস ও জিরা গুঁড়াও মেশানো যায় বোরহানির সাথে। টক দইয়ের ভিতর সবকিছু দিয়ে হ্যান্ড বিটার দিয়ে ভাল করে ফেটে বা ব্লেন্ডারে দিয়ে বোরহানি তৈরি করা যায়।

২। সালাদের সাথে

টক দই আরও খাওয়া যায় সালাদের সাথে। টমাটো, শসা, গাজর ইত্যাদি কেটে টক দই মিশিয়ে তার সাথে বিট লবন, গোল মরিচের গুঁড়া যোগ করে খেতে হবে।

এছাড়াও বিভিন্ন ফল কেটে টক দই সহযোগেও খাওয়া যায়। দুটো পদ্ধতিই সুস্বাদু ও পুষ্টিকর।

৩। দই চিড়া

টক দই, ধুয়ে রাখা চিড়া, লবন, সামান্য চিনি মিশিয়ে ও খাওয়া যায়। এছাড়া ১ চামচ মিষ্টি দই এবং কলা, চিড়া মিশিয়ে ও খাওয়া যায়। এটি পেটের জন্য বেশ ভালো খাবার। তাছাড়া গরমের দিনে দই চিড়া খাওয়া বেশ স্বস্তিদায়কও।

আরও পড়ুন:- গুগল ম্যাপ ছাড়া যে জায়গা গুলো দেখা অসম্ভব !!!

৪। দইয়ের সঙ্গে চিনি

দইয়ের সঙ্গে এক চামচ চিনি মিশিয়ে খান, সারাদিন ভালো কাটবে।

৫। ঘোল বা লাচ্ছি

প্রতিদিন দই খেতে চাইলে লাচ্ছিকে বেছে নিতে পারেন। সকালে এক গ্লাস ঘোল অনেক স্বাস্থ্যসম্মত।

৬। রাইতা 

এটি একটি ভারতীয় খাবার। চাইলে এতে পেঁয়াজ, শসা, টমেটো ও অন্যান্য ভেষজ উপাদান মিশিয়ে নিতে পারেন, যা স্বাস্থ্যকরও বটে।

৭। কাধি

ঘোলের সঙ্গে বেসন মিশিয়ে একটি মুখরোচক কারি বানাতে পারেন যা ‘কাধি’ নামে পরিচিত। আপনি ভাতের সঙ্গে এই ‘কাধি’ খেতে পারেন।

৮। দই কালিজিরা 

দই-কালোজিরার মিশ্রণ নিয়মিত খেলে এক মাসে ১৫ কেজির মতো ওজন কমবে। এক চা চামচ কালোজিরাগুঁড়ো আর এক গ্লাস পাতলা টক দই ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে রাতে শোওয়ার আগে খেতে হবে। এই মিশ্রণ শরীরের মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে কমে যায় মেদের পরিমাণ এবং দ্রুত হ্রাস পায় শরীরের ওজন।

৯। রান্নায় টক দই

প্রতিদিন যেসন খাবার রান্না করা হয় স্বাদ বাড়াতে তার মদ্ধে চাইলেই ১ টেবিল চামচ দই ব্যবহার করা যায়। ছাড়া মাংস রান্নায় ও টক দই ব্যবহার করা হয়।

১০। সস এর বিকল্প হিসেবে

ভাজাপোড়া জাতীয় নাস্তায় সস বানানোর জন্য যেসব উপকারন ব্যবহার করা হয় তার মদ্ধে দই অন্যতম। বাসায় মেয়নিজ এর পরিবর্তে ব্যবহার করা যায় টক দই।

যেভাবেই টক দই খাওয়া হোক না কেন মূল কথা হচ্ছে এটি ভীষন উপকারি। নিয়মিতভাবে টক দই খেলে আমাদের শরীর থাকবে অনেক রোগমুক্ত, সতেজ ও স্বাভাবিক। যা প্রতিটি মানুষেরই কাম্য।

 আরো পড়ুন:-

Md. Moshiur Rahman Sami

হাই, আমি আমাকে চিনতে পছন্দ করি। আমি উপকারে আসতে পছন্দ করি । আমি নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পছন্দ করি। আমি চাই পরগমনের আগে পৃথিবীকে কিছু দিতে। আমি বিশ্বাস রাখি এটি করতে আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।

মন্তব্য বাক্সে কোনও স্প্যাম লিঙ্ক ভাগ করবেন না

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন