ছোটবেলায় আমাকে বিজ্ঞানের অনেক কিছুই শেখানো হয়েছিল যেগুলি ভুল ছিল। তবে সেটা আমারই স্বার্থে। কারণ তখন যদি সঠিক সেখানো হতো তাহলে আমার ছোট্ট মাথায় প্যাঁচ লেগে যেতো। অহেতুক বিজ্ঞানভীতি তৈরি হতো। তবে আমি এটা বলতে এখানে আসিনি…।
This post is for those who still believe people have not been to the moon |
এই প্রশ্নেরই অন্য একটি উত্তরে একজন ভাইয়া লিখেছেন ৩ জোকারকে চাঁদে পাঠানো হয়েছিল এটাই নাকি ছোটবেলায় তাকে ভুল শেখানো হয়েছিল। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে এটা নিয়েই এখানে আলোচনা করব।
প্রথমেই বলে রাখি যাদেরকে উনি জোকার বলেছেন তারা পৃথিবীর টপ ইন্টেলিজেন্ট মানুষদের কয়েকজন। তারা অত্যন্ত স্মার্ট ছিলেন। অনেক টাফ ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে তাদেরকে চাঁদে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল। তাদেরকে শেখানো হয়েছিল যেকোনো পরিস্থিতিতে সঠিক ডিসিশন কীভাবে নিতে হয়। এরকম মানুষকে জোকার বলা আর উপরের দিকে থুতু নিক্ষেপ করা একই জিনিস শেষমেষ তা পৃথিবীর অভিকর্ষ বলের প্রভাবে নিজের মুখেই পতিত হবে।
এবারে যারা যারা এখনো বিশ্বাস করেন মানুষ চাঁদে যায়নি তাদের কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর দেয়া যাকঃ
১. পতাকাটা কেন উড়ছে?
পতাকাটা একটু লক্ষ করেনতো। এটা কী আসলেই উড়ছে? উত্তর হচ্ছে না। পতাকার উপরে এলুমিনিয়ামের ফ্রেম লাগানো রয়েছে যেন এটা উড়ছে বলে মনে হয়। শুধুমাত্র একটা ভিজুয়াল ইলিউশন তৈরি করার জন্য।
তাও বিশ্বাস হলো না? নিচের ছবিটাকে লক্ষ করুন। বাম পাশে দেখা যাচ্ছে এস্ট্রোনট বাজ অলড্রিং পতাকাকে স্যালুট করছেন। এবং ডান পাশে উনি হাতটি নামিয়ে ফেলেছেন।এই দুই ক্ষেত্রেই পতাকাটি কিন্তু একই রকম আছে। যদি পতাকাটা বাতাসেই উড়তো তাহলে কী কয়েক সেকেন্ড পরও ঐ একই রকম থাকতো?
২. চাঁদের আকাশে তো অনেক তারা দেখা যাওয়ার কথা। কিন্তু ছবিতে তো কোনো তারা নেই? ডাল মে কুছ কালা হে🧐 এখন কী বলবা জেকি???
আরে ভাইইই মারো মুঝে। মুঝে মার🤦♂️ এই প্রশ্নের উত্তর তো একটা বাচ্চাও দিতে পারবে। এটার কারণ ক্যামেরার এক্সপোজার। ক্যামেরার শাটার স্পিড বাড়িয়ে কমিয়ে ক্যামেরার এক্সপোজার বাড়ানো কমানো হয়। এখানে ক্যামেরার এক্সপোজার বাড়ানো হলে তারাগুলো দেখা যেত ঠিকই কিন্তু চন্দ্রপৃষ্ঠ সাদা হয়ে যেত। এবার নিচের ছবিটি দেখেনঃ
এটা ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন থেকে একটা লাইভ ভিডিও থেকে স্ক্রিনশট নেয়া ছবি। এখানের আকাশে তারা কই? একই কারণে এখানেও তারাগুলো গায়েব হয়ে গিয়েছে। নাকি আবার বলবেন এটাও ভুয়া মানুষ মহাকাশেই যায় নি। ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন বলতে কিছু নেই। সব বানোয়াট, নাসার ষড়যন্ত্র 🤭
৩. ছায়াগুলো সব সমান্তরালে থাকার কথা যেহেতু আলোর উৎস কেবলমাত্র সূর্য। কিন্তু ছায়া বিভিন্ন দিকে হওয়ার কারণ কী?
আমরা জানি সমতল জায়গায় একমুখী আলো দ্বারা উৎপন্ন ছায়াগুলো সমান্তরাল হয়। কিন্তু চাঁদের পৃষ্ঠ কী সমতল? একদমই না। তাই আলো একদিক থেকে পড়লেও ছায়া বিভিন্ন দিকে উৎপন্ন হচ্ছে।
৪. ৫০ বছর আগে চাঁদে যেতে পারল এখন কেন পারে না?
চাঁদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ পাঠানোর অন্যতম লক্ষ ছিল মহাকাশবিজ্ঞানে নিজেদের কতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা। তৎকালীন সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোল্ড ওয়ার চলছিলো। সোভিয়েত ইউনিয়ন মহাকাশে প্রথম মানুষ পাঠানোর পর আমেরিকার জ্বলতে শুরু করে। তাই নাসা থেকে কিছু মার্কিন নভোচারী পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়।তবে জেনে খুশি হবেন মানুষ চাঁদে এক দুইবার যায়নি গিয়েছে ছয় বার। এর জন্য আমেরিকা নাসাকে প্রচুর অর্থবরাদ্দ করে এবং এতে সফল হওয়ায় তারা সোভিয়েত ইউনিয়নকে উচিত জবাব দিতে পেরেছিল। কিন্তু এখন সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেছে। মহাকাশবিজ্ঞানে রাশিয়া অনেক দুর্বল হয়ে গেছে। নাসাকে টেক্কা দেয়ার ক্ষমতা এখন কারো নেই। নাসা কেনো এখন চাঁদে হিউম্যান মিশন পাঠাবে এত কারি কারি টাকা খরচ করে। চাঁদ থেকে যে পরিমাণ শিলা ও মাটি সংগ্রহ করা হয়েছে সেগুলো এখনো গবেষণা করা হয়। এছাড়া চাঁদে স্বল্প খরচে রোভার পাঠানো হয় যেগুলো বছরের পর বছর সেখান থেকে ইনফরমেশন পাঠায়। মানুষ সর্বোচ্চ ৮ দিন চাঁদে থাকতে পারবে তাও আবার বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করে। এত অপচয় পোড়ামাটির চাঁদে কেন করতে যাবে মানুষ যেখানে আমাদের পরবর্তী সম্ভাবনাময় গন্তব্য মঙ্গল???
৫. পৃথিবীর ভ্যান অ্যালেন বেল্টকে তারা কীভাবে পার করলো। এটা পার করতে গিয়েই তো তাদের মারা যাওয়ার কথা ছিল?
বলে রাখি ভ্যান এলেন বেল্টের দুটি অংশ। ভিতরের অংশটি মারাত্মক ভয়াবহ যেটা কয়েক মিনিটের মধ্যে নভোচারীরা পার করে ফেলেছিলেন। বাইরের অংশটি পার হতে নভোচারীদের দেড় ঘন্টা সময় লেগেছিল। মহাকাশযানের গতিপথ এমনভাবেই ক্যালকুলেশন করেছিলেন বিজ্ঞানীরা যেন এর প্রভাব কম পরে নভোচারীদের উপর। তাছাড়া মহাকাশযানের অ্যালুমিনিয়ামের দেয়াল রেডিয়েশন থেকে বাঁচতে সাহায্য করেছিল। তারউপর ভ্যান অ্যালেন বেল্টের আবিষ্কারক জেমস ভ্যান অ্যালেন নিজেই মার্কিন নভোচারীদের উপর ভ্যান অ্যালেন রেডিয়েশনের প্রভাব নাকচ করে দিয়েছিলেন।
আর কোনো প্রশ্ন মাথায় আসতিছে না। নাইলে সেগুলাও এই উত্তরে দিয়ে দিতাম। তবে আমার প্রশ্ন, এখনো কী কেউ বিশ্বাস করেন পৃথিবী চ্যাপ্টা গোল না??
আরো পড়ুন:-
অনুগ্রহ করে নিচের ভিডিওটা একবার দেখুন ৷ লিঙ্কটা ক্লিক করে যদি না খোলে তাহলে ইউটিউবের সার্চবারে লিখুন— a funny thing happened on the way to the moon
উত্তরমুছুনমার্কিণ সরকারের দালালরা এই সিব্রেল সাহেবকে টিভি স্টুডিওতে ইন্টারভিউর নামে ডেকে মারধোরও পর্যন্ত করেছে ৷ আর রাস্তাঘাটে ভাড়াটে গুণ্ডাদের দিয়ে বারংবার শারীরিকভাবে মারাত্মক নিগ্রহও পর্যন্ত করেছে অনেকবার ৷ শেষে লোকে যাতে ভিডিওটা খুঁজে না পায় সেজন্য একই নাম দিয়ে অজস্র আলতু ফালতু ভিডিও বোঝাই করে দিয়েছে ইউটিউবে ৷ সিব্রেল সাহেবের নিজস্ব ওয়েবসাইটও আছে ৷ প্রয়োজনে নিজেই খুঁজে নিন ৷
https://youtu.be/bdQHKf48Mfw