আপনি যতবেশি দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন, আপনার ক্যারিয়ার ততবেশি উজ্জ্বল হবে। কোনো চাকরি পেতে হলেও আপনাকে আপনার যোগ্যতা ও দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। কিন্তু কীভাবে ক্যারিয়ার বিষয়ক দক্ষতা ও যোগ্যতাগুলো অর্জন করবেন? এ ক্ষেত্রে এক বাক্যে উত্তর হবে, আপনি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করুন। স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করে আপনি যেসব দক্ষতা ও কৌশল অর্জন করতে সক্ষম হবেন, তা বর্তমান সময়ের প্রতিযোগিতামূলক চাকরির দৌঁড়ে, আপনাকে অন্যদের থেকে অনেক দূর সামনের দিকে এগিয়ে রাখবে।
সাধারণত স্বেচ্ছাসেবা বলতে আমরা এমন সব কর্মকাণ্ডকে বুঝি, যা মূলত বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা দূরীকরণ ও উন্নয়নের লক্ষ্যে মানুষ বিনা পারিশ্রমিকে স্বেচ্ছায় করে থাকে। স্কুল, কলেজ ও ভার্সিটিতে পড়াশোনাকালীন কিংবা যেকোনো বয়সে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ করা সম্ভব। দেশ ও বিদেশে রয়েছে অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান, যারা সারা বছর জুড়েই নানা ধরনের স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজের আয়োজন করে থাকে। প্রথমে যে বিষয়টা খেয়াল রাখতে হবে তা হলো, কোন ধরনের স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানে আপনি কাজ করতে চান। তারপর ঐ প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী আবেদন করুন, তারা আপনাকে নির্বাচিত করলে আপনি সে প্রতিষ্ঠানের হয়ে স্বেচ্ছাসসেবামূলক কাজ করার সুযোগ পাবেন।
এছাড়াও নিজ উদ্যোগেও কিছু কিছু স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ করা সম্ভব। এসকল কাজের সাথে নিজেকে যুক্ত রাখলে, এমন কিছু যোগ্যতা, দক্ষতা ও গুণাবলি অর্জন করতে সক্ষম হবেন, যা পরবর্তীতে আপনার ক্যারিয়ার গঠনে বিশেষ সুবিধা প্রদান করবে। স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ করার অভিজ্ঞতা আপনার ক্যারিয়ারে জন্য যে ৫ টি বিশেষ সুবিধা বয়ে নিয়ে আসে, সে সম্পর্কে এ আর্টিকেলটিতে আলোচনা করবো।
১. আপনার জীবনবৃত্তান্তকে উজ্জ্বল করবে
স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ আপনার সিভিতে একটি আকর্ষণীয় অভিজ্ঞতা হিসেবে যুক্ত হতে পারে। আপনি যখন কোনো চাকরিতে আবেদন করবেন, তখন আপনার সিভিতে (CV) যদি কোনো স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ করা অভিজ্ঞতা থাকে, তবে তা নিয়োগকর্তাদের কাছে বিশেষভাবে আকর্ষণ করবে। মনে করুন, ভাইবা বোর্ডে আপনার পর্যায়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন একাধিক প্রার্থী উপস্থিত।
এমতাবস্থায়, আপনার যদি স্বেচ্ছাসেবা করার অভিজ্ঞতা থাকে এবং অন্যদের যদি কোনো স্বেচ্ছাসেবী কাজ করার অভিজ্ঞতা না থাকে, তবে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্যদের থেকে আপনি এগিয়ে থাকবেন। সবাই স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতে পারে না, স্বেচ্ছাসেবক হওয়াও একধরনের যোগ্যতা। ভলান্টিযারিং আপনাকে শুধু যোগ্যতা সম্পন্নই করবে না, বরং বিচক্ষণ ও অভিজ্ঞ করে তুলবে।
২. নতুন ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সাথে সাক্ষাৎ লাভের সুযোগ সৃষ্টি
আপনি যখন স্বেচ্ছাসেবামূলক কোনো কাজ করতে যাবেন, তখন আপনার বিভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা, যোগ্যতা ও দক্ষতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের সাথে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি হবে। আবার নতুন নতুন মানুষের সাথে আপনার পরিচয় হবে। যারা স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে আসে, তারা অনেক বেশি আন্তরিক ও বন্ধুভাবাপন্ন হয়ে থাকেন। ফলে সহজেই তাদের সাথে বন্ধুত্বতা ও নেটওয়ার্কিং গড়ে উঠবে। বর্তমান সময়ে নেটওয়ার্কিং ক্যারিয়ার গঠনে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে থাকে। নেটওয়ার্কের পরিচিত মানুষদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখলে পরবর্তীতে আপনার ক্যারিয়ারের বিভিন্ন কাজে সাহায্য সহযোগিতা পাবেন।
আর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগে নেটওয়ার্কিং বজায় রাখাও বেশ সহজ। এভাবে স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ আপনার চলার পথকে অনেক সহজ করে তুলতে পারে।
৩. ক্যারিয়ারের লক্ষ্য নির্বাচনে সাহায্য প্রদান
আপনি স্বেচ্ছাসেবাধর্মী কাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকলে, বিভিন্ন ধরনের কাজকর্ম ও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে সক্ষম হবেন। আপনি যদি পড়াশোনাকালীন সময়েই এসব অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন, তবে খুব সহজেই কীভাবে ও কোথায় আপনার ক্যারিয়ার গড়বেন, তার সঠিক সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে সক্ষম হবেন। আমাদের তরুণ সমাজের অনেকই ক্যারিয়ারের লক্ষ্য স্থির করতে হিমশিম খায় এবং কেউ কেউ হতাশাগ্রস্তও হয়ে পড়ে।
আপনার স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকলে, ক্যারিয়ার গঠন নিয়ে তেমন চিন্তা করতে হবে না এবং সহজেই ক্যারিয়ারে সফলতাও অর্জন করতে পারবেন।
৪. নতুন দক্ষতা ও যোগ্যতা অর্জন
স্বেচ্ছাসেবাধর্মী কাজগুলো করার মাধ্যমে আপনি বিভিন্ন নতুন নতুন দক্ষতা ও যোগ্যতা অর্জন করতে পারবেন; যা আপনার ক্যারিয়ারসহ পুরো জীবনধারণেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এসব স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজগুলো থেকে লিডারশীপ, যোগাযোগ, ব্যবস্থাপনা, পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং দলগত কাজের মতো পেশাগত দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করতে সক্ষম হবেন। শুধু পড়ালেখার মাধ্যমে এসব অর্জন করা সম্ভব না।
আবার আপনার এসব দক্ষতাগুলো আগে থেকেই অর্জন করা থাকে, তবে ভলান্টিয়ারিংয়ের মাধ্যমে আরো পরিপক্ব হয়ে উঠবেন। স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজের মাধ্যমে অর্জিত এসব দক্ষতা পরবর্তীতে চাকরী, ব্যবসা অথবা অন্য যেকোনো কর্মক্ষেত্রে আপনাকে বিভিন্ন সুবিধা এনে দেবে।
৫. আত্মবিশ্বাস অর্জন
আপনার ক্যারিয়ার শুরুর সময় কিংবা নতুন চাকরি খোঁজার ক্ষেত্রে দৃঢ় আত্মবিশ্বাস থাকটা খুবই জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও নিজের দক্ষতা, পারদর্শিতা ও দুর্বলতা সম্পর্কেও জানতে পারা দরকারি বিষয়। স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজের মাধ্যমে আপনি নিজেকে সক্রিয়, কর্মঠ এবং কার্যকর হিসেবে খুঁজে পাবেন, যার ফলে আপনি ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবেন। অন্যদিকে স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজের মাধ্যমে আপনি নিজের ভালোলাগা, মূল্যবোধ, কর্ম দক্ষতা, পারদর্শিতা, দুর্বলতা ও ভুলগুলো সম্পর্কে অবগত হতে পারবেন। যা আপনার ক্যারিয়ার গঠনে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করবে।
এতে ক্যারিয়ার শুরু করার আগেই দুর্বলতাগুলোকে কাটিয়ে ও ভুলগুলো সংশোধন করে নিজেকে একজন যোগ্য ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন। আপনার নিজের দক্ষতা ও যোগ্যতা সম্পর্কে উপলব্ধি করতে পারলে আপনার আত্মবিশ্বাস বহুগুণে বেড়ে যাবে। আর আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পেলে আপনি যে কোনো কাজে খুব সহজে সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হবেন।
স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ শুধুমাত্র আমাদের ক্যারিয়ারকে সফলভাবে গড়তেই সাহায্য করবে না, বরং আপনার ধর্মীয়, নৈতিক ও মানবিক গুণাবলী অর্জনেও সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এজন্য আমাদের স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ করার কোনো সুযোগ আসলেই, সে সুযোগকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো উচিৎ।
আরো পড়ুন:-